প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা গোড়ালি ব্যথাঃ কি ও কেন হয় এবং কাদের হয়

প্লান্টার ফ্যাসাইটিস বা গোড়ালি ব্যথাঃ কি ও কেন হয় এবং কাদের হয়

সকালে ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা ফেলতেই ব্যথা, বিশেষ করে গোড়ালিতে বেশি ব্যথা হয়। পা ফেললে মনে হয় যেন কাঁটা ফুটল। কষ্ট করে কয়েক কদম হাঁটার পর ধীরে ধীরে ব্যথাটা কমতে শুরু করে। এই সমস্যার নাম প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।

 

প্লান্টার ফ্যাসাইটিস কি ?

পায়ের গোড়ালির হাড় পায়ের পাতার অন্যান্য অংশের সঙ্গে মোটা ব্যান্ডের মতো একটি পর্দার সাহায্যে লাগানো থাকে। এই পর্দা কোনোভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হলে প্রদাহের সৃষ্টি হয়, যেটাকে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস রোগ বলা হয়।

 

কেন হয় ?

পায়ের গোড়ালির নিচে একটি ব্যান্ডের মতো মোটা পর্দা থাকে, যেটির নাম প্ল্যান্টার ফ্যাসা। এই মোটা পর্দার তন্তুগুলো গোড়ালির সঙ্গে পায়ের আঙুলগুলির সংযোগ স্থাপন দৃঢ় করে রাখে। প্ল্যান্টার ফাসা কোনো কারণে আক্রান্ত বা আঘাতপ্রাপ্ত হলে প্রদাহের সৃষ্টি হয় এবং ব্যথা হয়। অনেকসময় গোড়ালির হাড়ে স্পার (কাঁটার মতো হাড় বৃদ্ধি হওয়া ) হয়ে প্ল্যান্টার ফ্যাসিটিস হতে পারে।

 

কারা ঝুকিতে আছেন ?

সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সীদের এই সমস্যা বেশি হয়। ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এই সমস্যায় বেশি ভুগেন। এ ছাড়া কিছু বিষয় এর ঝুঁকি বাড়ায়। যেমন:

# দীর্ঘ সময় গোড়ালিতে চাপ পড়ে এমন কাজ।

যেমনঃ নাচ, ম্যারাথন দৌড়, অতিরিক্ত হাঁটা

# অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা।

# পায়ের অস্বাভাবিক বাঁক

# বেশির ভাগ সময় দাঁড়িয়ে কাজ করা

# হঠাৎ করে খেলাধুলা করা

# দীর্ঘক্ষণ হিল বা শক্ত সোলের ভারী জুতা

ব্যবহার করা

# গর্ভাবস্থা

# উঁচুনিচু জায়গায় হাঁটা বা দৌড়ানো

# এ ছাড়াও কিছু রোগ আছে। যেমনঃ

গাউট, ডায়াবেটিস, স্পনডিলাইটিস ইত্যাদি।

 

উপসর্গ সমূহ কি কি ?

# সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথম

কয়েক কদম দিতে বেশ কষ্ট হয় এবং পায়ের

তালুতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।

# তবে দিন শেষে ব্যথার তীব্রটা আস্তে আস্তে

কমে আসে।

# এমনকি দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর হাঁটতে

গেলেও তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

 

কিভাবে রোগ নির্ণয় হয় ?

রোগ নির্ণয়ের জন্য এর রোগের ইতিহাস ও শারীরিক কিছু পরীক্ষাই যথেষ্ট। তবে এ-সংক্রান্ত অন্যান্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য প্রয়োজনে কিছু রক্ত পরীক্ষা, এক্স-রে ও আলট্রাসাউণ্ড করা হয়।

 

চিকিৎসা কি ?

এ রোগের চিকিৎসার জন্য একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে সমন্বিত চিকিৎসা নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে ……

# জীবনধাঁরা পরিবর্তন

# ওষুধ

# ব্যায়াম

# ফিজিক্যাল থেরাপি

# অর্থোসিস

# অপারেশন

 

♣জীবনধাঁরা পরিবর্তনঃ

 

# ওজন বেশি হলে কমানো

# দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে না থাকা

# নরম সোলের ফিট জুতা পরা

# খালি পায়ে না হাঁটা

# ঘরে নরম সোলের স্যান্ডেল ব্যবহার করা

# পায়ের তালুর ওপর অত্যাধিক ভর না দেওয়া

ইত্যাদি।

 

♣ওষুধঃ

ব্যথানাশক ওষুধ সেবন ও পায়ের তালুতে মলম দিয়ে ম্যাসাজ করা।

 

♣ব্যায়ামঃ

প্লান্টার ফ্যাসা স্ট্রেস, ফুট সার্কল, টো কার্ল, টো টাওয়েল কার্ল ইত্যাদি ব্যায়াম।

 

♣ফিজিক্যাল থেরাপিঃ

ফিজিওথেরাপির মধ্যে আলট্রাসাউন্ড থেরাপি ও শকওয়েভ থেরাপি বেশ কার্যকর

 

♣অর্থোসিসঃ

রাতের বেলা পায়ের তালুর অবস্থান ঠিক রাখার জন্য “রেস্টিং স্প্লিন্ট” এবং হাঁটার সময় গোড়ালির নিচে “হিল কুশন” ব্যবহার করা যেতে পারে

 

♣ইনজেকশনঃ

ব্যথা দীর্ঘমেয়াদি বা তীব্র হলে, আলট্রাসাউন্ডের মাধ্যমে প্লান্টার ফ্যাসার চারপাশে ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে।

 

*** সম্পাদনায় ***

ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান

এমবিবিএস, এফসিপিএস

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

পার্কভিউ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ, চট্টগ্রাম

চীফ কনসালটেন্ট,

খিদমাহ পেইন এন্ড প্যারালাইসিস কেয়ার

যোগাযোগঃ ০১৩১২ ৩৯ ৫৬ ৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *