সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস বা ঘাড়ের বয়সজনিত ক্ষয়বাত -কি/কেন/কাদের হয়

হঠাৎ করেই ঘাড় ব্যথা, এটি খুব সাধারণ ও পুরাতন একটি সমস্যা কিন্তু খুবই কষ্টদায়ক। বেশির ভাগ মানুষই জীবনের কোনো এক সময় ঘাড়ের ব্যাথায় ভোগেন। এই ব্যাথার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হল মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের “বয়সজনিত ক্ষয়বাত।

তাই আসুন জেনে নিই ……

সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস কি ?

মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের অস্থি ও তরুণাস্থি গুলোতে ক্ষয়ের কারণে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে যে রোগ হয়, তাকেই বলে ঘাড়ের বয়সজনিত ক্ষয়বাত বা সার্ভিকাল স্পন্ডাইলোসিস।

 

কাদের হয় ?

# সার্ভিক্যাল স্পন্ডাইলোসিস হল একটি বয়স বৃদ্ধিজনিত রোগ

# ৪০ বৎসর বয়সের পর (আগেও হতে পারে) পুরুষ বা মহিলা উভয়ই আক্রান্ত হতে

পারেন

 

কারা ঝুঁকিতে আছেন ?

# যারা সাধারণত ঘাড় সামনে ঝুঁকিয়ে কাজ করেন। যেমন-

একনাগাড়ে মোবাইল-কম্পিউটারের কাজ, সেলাই করা ইত্যাদি

# ঘাড়ের ঝাঁকুনি হয় এমন কাজ। যেমন-

মাথায় ভার নেয়া, মোটরসাইকেল বা সাইকেলে ব্যবহার, দীর্ঘ ভ্রমণ ইত্যাদি।

 

কি আছে ঘাড়ের ভিতরে (ঘাড়ের গঠন) ?

ঘাড়ের ক্ষয়বাত বুঝার জন্য ঘাড়ের গঠন সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকা জরুরী।

ঘাড়ের গঠনকারী উপাদান সমুহ হল-

– শক্তহাড় বা কশেরুকাঃ ঘাড় সাধারণত ৭টি কশেরুকা বা ভার্টিব্রা নিয়ে গঠিত

– নরম হাড় বা ডিস্কঃ দুই কশেরুকার মাঝখানে ডিস্ক বা নরম হাড় থাকে

– শাহী রগ বা কর্ডঃ কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে স্পাইনাল কর্ড বা শাহী রগ থাকে

– স্নায়ু বা নার্ভঃ কশেরুকার দুই দিক দিয়ে স্পাইনাল কর্ড হতে নার্ভ বের হয়ে হাতে

পৌঁছায়

 

ঘাড়ের ক্ষয়বাত কেন হয় ?

# সাধারণত ৩৫-৪০ বছর পর হতেই মানুষের শরীরে সব কিছুর ক্ষয় শুরু হয়।

# মেরুদন্ডের ঘাড়ের অংশের জয়েন্টে থাকা ডিস্ক বা নরম হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে

যায়।

# ডিস্ক বা নরম হাড় নতুন করে আর তৈরি হয় না, ফলে কশেরুকা বা শক্ত হাড়ের উপর

চাপ বৃদ্ধি পায়।

# ধীরে ধীরে মেরুদন্ডে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে, ক্ষয়বাত ও ব্যথা হয়।

 

উপসর্গ সমুহ কি কি ?

– ঘাড় নাড়াতে, ঘুরাতে ব্যথা লাগা

– ঘাড়ে শক্ত হয়ে জ্যাম ধরে থাকা

– ঘুমাতে কষ্ট

– হাতে, বাহুতে ঝিন ঝিন, সির সির্, অবশ

ভাব,ভার ভার, সূচ ফোটানোর অনুভুতি লাগা

– অনেক সময় ব্যথা কাঁধে, উপরের পিঠে,

বুকে, মাথার পিছনে ছড়িয়ে পড়তে পারে

 

কিভাবে ঘাড়ের রোগ নির্ণয় করা হয় ?

 

রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ কর্তৃক নিজ হাতে ঘাড়ের শারীরিক পরীক্ষা করা জরুরী। এর সাথে নিশ্চিতকরণ ও অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ

– রক্ত পরীক্ষা

– ঘাড়ের এক্স-রে

– ঘাড়ের এম,আর,আই

– ঘাড়ের সিটিস্ক্যান

– এন,সি,এস; ই,এম,জি

– হাড়ের স্ক্যানিং ইত্যাদি

 

চিকিৎসা কি?

 

ঘাড়ের ক্ষয়বাতের চিকিৎসা সাধারণত তিন ধাপে করা হয়।

 

১. প্রাথমিক বা কনজারভেটিভ চিকিৎসা

২. ইন্টারভেনশন (ইঞ্জেকশন) চিকিৎসা

৩. অপারেশন (সার্জারী)

 

আসুন একটু বিস্তারিত জানা যাক…………

 

♦১, প্রাথমিক বা কনজারভেটিভ চিকিৎসাঃ

প্রাথমিকভাবে নিচের বিষয়বস্তু গুলোর সমন্বনয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়,

 

-জীবনধারা পরিবর্তন

-ফিজিওথেরাপি

-ব্যায়াম

-ঔষধ

 

♣জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শঃ

 

– ঘাড় সামনে ঝুঁকিয়ে বেশিক্ষণ কাজ করা যাবেনা

– কাজের জায়গায় চেয়ার টেবিল এমন ভাবে রাখবেন

যাতে ঘাড় সামনে ঝুকিয়ে কাজ করতে না হয়

– ঘুমানোর সময় ঘাড়ের বাঁকের সাথে জুতসই বালিশ ব্যবহার করবেন

– চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে সার্ভিক্যাল কলার ব্যবহার করবেন

– ভ্রমনের সময় এবং বসা অবস্থায় ঘুমাবেন না

– শুয়ে শুয়ে বা কাত হয়ে পড়বেন না

– পিছনে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাবেন না, শরীর ঘুরাবেন

– মাথায় ভারী জিনিস বহন করবেন না

– সেলুনে ঘাড় মালিশ বা মটকাবেন না

– বোতলে করে পানি পান করবেন না

 

♣ফিজিওথেরাপিঃ

এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্কদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয় সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভালো। একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রোগীর সার্বিক অবস্তা বিবেচনা করে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যেমনঃ

# শর্ট-ওয়েভ থেরাপি

# টানা বা ট্রাকশন থেরাপি

# আলট্রাসাউন্ড থেরাপি

# নার্ভ ইষ্টিমুলেশন থেরাপি

# ম্যানুপুলেশন থেরাপি, ইত্যাদি

 

♣ব্যায়ামঃ

ঘাড়ের চারপাশের পেশির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলো জরুরী

যেমনঃ ঘাড়ের মাংস পেশীর বলকারক ব্যায়াম,

কাঁধ উঁচুকরণ ব্যায়াম ইত্যাদি।

 

♣ঔষধঃ

রোগীর সার্বিক অবস্তা বিবেচনা করে ঔষধের পরামর্শ দেয়া হয়।

যেমনঃ

ব্যথানাশক ঔষধঃ—প্যারাসিটামল, এন,এস,এ,আই,ডি ইত্যাদি।

মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ, দুশ্চিন্তা কমানোর ঔষধ ইত্যাদি।

 

# ইন্টারভেনশন (ঘাড়ে ইঞ্জেকশন)

 

এটিকে বলা হয় ব্যথানাশক এপিডুরাল ইনজেকশন। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে ঘাড়ের জয়েন্টের ভিতরে ব্যথানাশক এই ইনজেকশন দেয়া হয়, যা নার্ভ বা স্নায়ুর মুলে পৌছে। ফলে স্নায়ুমূলের উত্তেজনা কমে যায়, যা ঘাড়ের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।

# অপারেশন (সার্জারী)

 

সম্পাদনায়ঃ———————-

ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান

এমবিবিএস, এফসিপিএস(ফিজিক্যাল মেডিসিন)

বাত-ব্যথা, মেরুদন্ড-জয়েন্ট রোগ, আর্থ্রাইটিস,

স্ট্রোক ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ

কনসালটেন্ট, পার্কভিউ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ,

পাঁচলাইশ, চট্টগ্রাম

যোগাযোগঃ ০১৩১২ ৩৯ ৫৬ ৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *