হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা ক্ষয়বাতঃ না জানার কারণে কষ্ট পাচ্ছেন না তো ?

হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা ক্ষয়বাত সবচেয়ে পরিচিত ক্ষয়জনিত আর্থ্রাইটিস। সাধারণত এটি প্রায় ৫০ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সী লোকদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এটি তরুণদের মধ্যেও হতে পারে। প্রায়ই দেখা যায় বয়স্কদের হাঁটু ব্যাথার কারণে হাঁটাচলায় কষ্ট হয়। দিন দিন চেয়ারে বসে নামাজ পড়ার প্রবণতাও বাড়ছে। তাই আসুন জেনে নিই ……………

হাঁটুর ক্ষয়বাত কি ?

→হাঁটুর ক্ষয়বাত কেন হয় ?

→কারা ঝুঁকিতে আছে ?

→কি আছে হাঁটুর ভিতরে (হাঁটুর গঠন ) ?

→উপসর্গ সমুহ কি কি ?

→কিভাবে হাটুঁর রোগ নির্ণয় করা হয় ?

→চিকিৎসা কি?

→পরিণতি কি?

 

♦হাঁটুর ক্ষয়বাত কি ?♦

হাঁটুর অস্থি ও তরুণাস্থি গুলোতে ক্ষয়ের কারণে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে যে রোগ হয়, তাকেই বলে হাঁটুর ক্ষয়বাত বা হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলে।

♦হাঁটুর ক্ষয়বাত কেন হয় ?♦

 

→সাধারণত মানুষের শরীরে ৩৫-৪০ বছর পর হতেই সব কিছুর ক্ষয় শুরু হয়।

→অস্টিওআর্থ্রাইটিসে, হাঁটুর জয়েন্টে থাকা তরুণাস্থি বা নরম হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়।

→তরুণাস্থি বা নরম হাড় নতুন করে আর তৈরি হয় না, ফলে অস্থি বা শক্ত হাড়ের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়।

→ধীরে ধীরে জয়েন্টে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে, ক্ষয়বাত ও ব্যথা হয়।

♦কারা ঝুঁকিতে আছে ?♦

 

→যাদের বয়স ৫০ এর অধিক,

→লিঙ্গঃ পুরুষের তুলনায় মহিলাদের বেশি হয়

→যাদের হাঁটুতে আঘাতের ইতিহাস আছে

→যাদের ওজন বেশি/স্থুলতা আছে

→যারা হাঁটুর অতিরিক্ত ব্যবহার করে

→জীনগত/বংশগতভাবে হতে পারে

→যাদের জয়েন্টের বিকৃতি আছে

♦কি আছে হাঁটুর ভিতরে (হাঁটুর গঠন ) ?♦

হাঁটুর ক্ষয়বাত বুঝার জন্য হাঁটু সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকা জরুরী।

হাঁটুর গঠনকারী উপাদান সমুহ হল-

→শক্তহাড় বা অস্থিঃ

ফিমার এর নিচের অংশ,

প্যাটেলা বা মালা,

টিবিয়ার উপরের অংশ

→নরম হাড় বা তরুণাস্থিঃ এটি শক্ত হাঁড়কে ঢেকে রাখে এবং জয়েন্টকে পিচ্ছিল করে

→জয়েন্ট ঝিল্লী বা সাইনোভিয়ামঃ যা হতে সাইনোভিয়াল ফ্লুইড বা ঘন তরল নিঃসৃত হয়, যেটা হাঁটুকে সতেজ রাখে

→মাসল বা মাংসপেশীঃ হাঁটুকে চারিদিকে আবৃত রাখে

→লিগামেন্ট বা রগঃ ইহা মাংসের মতো চিকন তন্ত বিশিষ্ট অধিকতর চাপ সহনীয় যা হাঁটুর চারদিকে সাপোর্ট হিসেবে ছড়িয়ে থাকে।

♦উপসর্গ সমুহ কি কি ?♦

এ রোগে প্রাথমিক পর্যায়ে..

→রোগী দীর্ঘক্ষণ হাঁটলে বা চেয়ার থেকে উঠতে গিয়ে ব্যথা করে

→সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামার সময় ব্যথা অনুভব করেন

→পায়খানায় বসার সময় বা নামাজ পড়ার সময় কষ্ট হয়

→হাঁটাচলায় হাটুঁর ভিতরে কট কট শব্দ অনুভুত হয়

→আক্রান্ত হাঁটু ফুলে হাঁটুর তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে

→ব্যথার কারনে রোগী খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটে

→অনেক সময় উরুর মাংসপেশি শুকিয়ে যেতে পারে

 

সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে পরবর্তীতে…

→হাঁটু পুরোপুরি সোজা করা বা ভাঙ্গা সম্ভব হয় না,

→কখনো কখনো হাঁটু বেকে যেতে পারে

 

♦কিভাবে হাটুঁর রোগ নির্ণয় করা হয় ?♦

– রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ কর্তৃক নিজ হাতে হাঁটু পরীক্ষা করা জরুরী, এর সাথে নিশ্চিতকরণ ও অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ

o রক্ত পরীক্ষা

o হাঁটুর এক্স-রে

o হাঁটুর আল্ট্রাসনোগ্রাম

o সাইনোভিয়াল ফ্লুইড পরীক্ষা

o হাঁটুর এম,আর,আই

o আর্থোস্কপি, ইত্যাদি

♦পরিণতি কি?♦

→কষ্টদায়ক হলেও, এটি কোন প্রাণঘাতী রোগ নয়

→সঠিক চিকিৎসা নিলে হাটুর ক্ষয় রোধ করা সম্ভব

→চিকিৎসা না নিলে হাটু অচল হয়ে যেতে পারে।

কৃতজ্ঞতা:-

ডাঃ মাহফুজুর রহমান

এমবিবিএস,এফসিপিএস

(ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন)

ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ

চেম্বারঃ পার্কভিউ হসপিটাল লিমিটে

চীফ কনসালটেন্ট,

খিদমাহ পেইন এন্ড পারালাইসিস কেয়ার

যোগাযোগ ও টেলিমেডিসিনঃ ০১৩১২- ৩৯৫ ৬৩৮

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *