গাউট বা গেঁটে বাতঃ কি এবং কেন ও কাদের হয়

যে সকল কারণে জয়েন্টে আচমকা তীব্র ব্যথা হয়, তার মধ্যে গাউট অন্যতম। এটি জয়েন্টের এক প্রকারের প্রদাহজনিত বাতরোগ। গরীবদের তুলনায় ধনীরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয় বলে, ঐতিহাসিকভাবে এটাকে “রাজাদের রোগ” বা ধনীদের রোগও বলা হয়।

গাউট বা গেঁটে বাত কি?

গাউট হলো উপসর্গের সমষ্টি যেখানে মনোসোডিয়াম ইউরেট মনোহাইড্রেট ক্রিস্টাল নামক একপ্রকার লবণ দানা অস্থিসন্ধি এবং এর চারপাশের টিস্যুতে জমে প্রদাহ তৈরি করে।

কাদের এই রোগ বেশী হয়?

# নারীদের তুলনায় পুরুষদের ৫ গুন বেশী হয়

# গরীবদের তুলনায় ধনীদের বেশী হয়

 

কারা ঝুঁকিতে আছে?

জীবন যাত্রার ধরনঃ

  • দেহের অতিরিক্ত ওজন
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, কলিজা ইত্যাদি বেশী খেলে
  • অতিরিক্ত ব্যায়াম করলে
  • অতিরিক্ত মদ্যপান করলে

 

জেনেটিক কারণঃ

  • জন্মগত কিডনি সমস্যা
  • নির্দিষ্ট কিছু এনজাইমের সমস্যা

 

কিছু রোগঃ

  • কিডনি ফেইলিয়র
  • পলিসাইথেমিয়া
  • উচ্চ রক্তচাপ, ইত্যাদি

 

কিছু ঔষধ যেমন:

  • ইকোসপ্রিন
  • ডায়ইউরেটিকস
  • ক্যান্সারের চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ঔষধ, ইত্যাদি

 

উপসর্গ সমূহ কি কি?

 

# রোগী তার জীবনের সবচেয়ে তীব্র ও ভয়াবহ ব্যথার কথা বলে

# অধিকাংশ সময় হঠাৎ পায়ের বুড়ো আঙ্গুলের গোড়া ফুলে লাল হয়ে যায়

# হাঁটু, কাঁধ, কনুই বা অন্য কোন জয়েন্টও ফুলে যেতে পারে

# হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় হতে থাকে

# ক্রমান্বয়ে জয়েন্টের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হারাতে থাকে

 

কিভাবে রোগ নির্ণয় হয়?

 

রোগের ইতিহাস জেনে, রোগীকে কিছু শারীরিক পরীক্ষা করে এবং কিছু ল্যাবরেটরি টেস্ট করে সহজেই এ রোগ নির্ণয় করা যায়। টেস্টের মধ্যে রয়েছে ………

# কিছু সাধারণ রক্ত পরীক্ষা

# রক্তে ইউরিক এসিডের লেভেল দেখা

# আক্রান্ত জয়েন্টের ভিতরের তরল (সাইনোভিয়াল ফ্লুইড) টেস্ট করা

# আক্রান্ত জয়েন্টের এক্স-রেও প্রয়োজন

 

চিকিৎসা কি?

 

♣ প্রাথমিক চিকিৎসাঃ

  • আক্রান্ত জয়েন্টে বরফ লাগাতে হবে এবং বিশ্রামে রাখতে হবে
  • ব্যথানাশক ঔষধ – ইন্ডোমেথাসিন, ডাইক্লোফেনাক ইত্যাদি
  • রক্তে ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ – কল্কিসিন।
  • প্রদাহ কমানোর ঔষধ – স্টেরয়েড

♣ দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসাঃ

  • ওজন বেশী থাকলে কমাতে হবে
  • মদ্য পানের অভ্যাস থাকলে বাদ দিতে হবে
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- মাছ, মাংশ (হাঁসভেড়া, কবুতর,খাসি ইত্যাদি), ডিম, শিমের বিচি, কলিজা ইত্যাদি খাওয়া যথা সম্ভব কমিয়ে আনতে হবে।

→যেসব রোগের কারণে গাউট হয় সেসব রোগের যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে।

 

পরিণতি কি?

 

# কষ্টদায়ক হলেও, এটি কোন প্রাণঘাতী রোগ নয়

# সঠিক চিকিৎসা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে প্রতিরোধ

করা সম্ভব

# চিকিৎসা না নিলে আক্রান্ত জয়েন্টের ক্ষয় হতে পারে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *