লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস” বা কোমরের বয়সজনিত ক্ষয়বাত

বয়স্কদের কোমরে ব্যথা, এটি খুব সাধারণ ও পুরাতন একটি সমস্যা, কিন্তু খুবই কষ্টদায়ক।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সারা বিশ্বে ৭০ ভাগ লোক জীবনে কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হয়। এই ব্যাথার অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হল মেরুদন্ডের কোমরের অংশের “বয়সজনিত ক্ষয়বাত” বা “লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস”।
তাই আসুন জেনে নিই ……………
-কোমরের ক্ষয়বাত কি ?
-কোমরের ক্ষয়বাত কেন হয় ?
-কারা ঝুঁকিতে আছে ?
-কি আছে কোমরে (কোমরের গঠন) ?
-উপসর্গ সমুহ কি কি ?
-কিভাবে কোমরের ক্ষয় নির্ণয় করা হয় ?
-চিকিৎসা কি ?
♦লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস কি ?
মেরুদন্ডের কোমরের অংশের অস্থি ও তরুণাস্থি গুলোতে ক্ষয়ের কারণে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে যে রোগ হয়, তাকেই বলে কোমরের বয়সজনিত ক্ষয়বাত বা লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস।
♦কাদের হয় ?
→লাম্বার স্পন্ডাইলোসিস হল একটি বয়স বৃদ্ধিজনিত রোগ
→৪০ বৎসর বয়সের পর (আগেও হতে পারে) পুরুষ বা মহিলা উভয়ই আক্রান্ত হতে পারেন
♦কারা ঝুঁকিতে আছেন ?
→যারা সাধারণত কোমর সামনে ঝুঁকিয়ে কাজ করেন। যেমন-
ভারি জিনিস উঠানো, ঝাড়ু দেয়া,
টিউবওয়েল চাপা ইত্যাদি
→যারা একনাগাড়ে বসে কাজ করেন, যেমন –
অফিসে কাজ, কম্পিউটারের কাজ, সেলাই করা ইত্যাদি।
→কোমরের ঝাঁকুনি হয় এমন কাজ। যেমন-
মোটরসাইকেল বা সাইকেলে ব্যবহার, দীর্ঘ ভ্রমণ ইত্যাদি।
♦কি আছে কোমরের ভিতরে (কোমরের গঠন) ?
কোমরের ক্ষয়বাত বুঝার জন্য কোমরের গঠন সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান থাকা জরুরী।
কোমরের গঠনকারী উপাদান সমুহ হল-
– শক্তহাড় বা কশেরুকাঃ কোমরে সাধারণত ৫টি কশেরুকা বা শক্ত হাড় থাকে
– নরম হাড় বা ডিস্কঃ দুই কশেরুকার মাঝখানে ডিস্ক বা নরম হাড় থাকে
– শাহী রগ বা কর্ডঃ কশেরুকার মধ্যবর্তী স্থানে স্পাইনাল কর্ড বা শাহী রগ থাকে
– স্নায়ু বা নার্ভঃ কশেরুকার দুই দিক দিয়ে স্পাইনাল কর্ড হতে নার্ভ বের হয়ে পায়ে পৌঁছায়
♦কোমরের ক্ষয়বাত কেন হয় ?
→সাধারণত ৩৫-৪০ বছর পর হতেই মানুষের শরীরে সব কিছুর ক্ষয় শুরু হয়।
→মেরুদন্ডের কোমরের অংশের জয়েন্টে থাকা ডিস্ক বা নরম হাড় ধীরে ধীরে ক্ষয় হয়ে যায়।
→ডিস্ক বা নরম হাড় নতুন করে আর তৈরি হয় না, ফলে কশেরুকা বা শক্ত হাড়ের উপর চাপ বৃদ্ধি পায়।
→ধীরে ধীরে মেরুদন্ডে গঠনগত পরিবর্তন হয়ে, ক্ষয়বাত ও ব্যথা হয়।
♦উপসর্গ সমুহ কি কি ?
– কোমর নাড়াতে, ঘুরাতে ব্যথা লাগা
– কোমরে শক্ত হয়ে জ্যাম ধরে থাকা
– কোমরের মাংসপেশি কামড়ানো
– পা ঝিন ঝিন, সির সির্, অবশ ভাব,
ভার ভার, সূচ ফোটানোর অনুভুতি লাগা
– অনেক সময় ব্যথা উরুতে, হাঁটুর নিচে,
পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়তে পারে
♦কিভাবে কোমরের রোগ নির্ণয় করা হয় ?
– রোগের ইতিহাস জানা এবং বিশেষজ্ঞ কর্তৃক নিজ হাতে কোমরের শারীরিক পরীক্ষা করা জরুরী। এর সাথে নিশ্চিতকরণ ও অন্য রোগ থেকে আলাদা করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা প্রয়োজন। যেমনঃ
o রক্ত পরীক্ষা
o কোমরের এক্স-রে
o কোমরের এম,আর,আই
o কোমরের সিটিস্ক্যান
o এন,সি,এস; ই,এম,জি
o বি,এম,ডি
o হাড়ের স্ক্যানিং ইত্যাদি
♦♦চিকিৎসা কি ?♦♦
কোমরের ক্ষয়বাতের চিকিৎসা সাধারণত তিন ধাপে করা হয়।
১ প্রাথমিক বা কনজারভেটিভ চিকিৎসা
২ ইন্টারভেনশন (ইঞ্জেকশন) চিকিৎসা
৩ অপারেশন (সার্জারী)
আসুন একটু বিস্তারিত জানা যাক…………
♦ ১, প্রাথমিক বা কনজারভেটিভ চিকিৎসাঃ
প্রাথমিকভাবে নিচের বিষয়বস্তু গুলোর সমন্বনয়ে চিকিৎসা শুরু করা হয়,
-জীবনধারা পরিবর্তন
-ফিজিওথেরাপি
-ব্যায়াম
-ঔষধ
♣জীবনধারা পরিবর্তনের পরামর্শঃ
o ফোম বা বেশী নরম বিছানায় শুবেন না
o কোমর বাঁকা বা নরম করে কোন কাজ করবেন না
o সামনে ঝুঁকে ভারী কিছু তুলবেন না
o কোন জিনিস তোলার সময় কোমর শক্ত রেখে সোজা ভাবে তুলবেন
o তীব্র ব্যথা থাকা অবস্থায় চেয়ারে নামায পরবেন
o বাথরুমে হাই কমোড বা চেয়ার কমোড ব্যবহার করুন
o বেশী ব্যাথা থাকা অবস্থায় ব্যায়াম করবেন না
o শোয়া থেকে উঠার সময় একদিকে কাত হয়ে হাতে ভর দিয়ে উঠবেন
o সোজা হয়ে চেয়ারে বসে কাজ করবেন
o বেশীক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না
o ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তায় ভ্রমণ করবেন না
o কাজের সময় বা ভ্রমণের সময় কোমরের বেল্ট ব্যবহার করবেন
♣ফিজিওথেরাপিঃ
এটি একটি আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্কদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয় সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভালো। একজন ফিজিক্যাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ রোগীর সার্বিক অবস্তা বিবেচনা করে ফিজিওথেরাপির পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
যেমনঃ
শর্ট-ওয়েভ থেরাপি,
টানা বা ট্রাকশন থেরাপি
আলট্রাসাউন্ড থেরাপি
নার্ভ ইষ্টিমুলেশন থেরাপি
ম্যানুপুলেশন থেরাপি, ইত্যাদি
♣ব্যায়ামঃ
কোমরের পেশির কার্যকারিতা বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়ামগুলো জরুরী। যেমনঃ
-কোমরের মাংস পেশীর বলকারক ব্যায়াম, -কোমরের মাংস পেশীর প্রসারণকরন ব্যায়াম, ইত্যাদি।
♣ঔষধঃ
রোগীর সার্বিক অবস্তা বিবেচনা করে ঔষধের পরামর্শ দেয়া হয়।
যেমনঃ
ব্যথানাশক ঔষধঃ—প্যারাসিটামল, এন,এস,এ,আই,ডি ইত্যাদি।
মাংশপেশী শিথিল করার ঔষধ, দুশ্চিন্তা কমানোর ঔষধ ইত্যাদি।
♣ইন্টারভেনশন (কোমরে ইঞ্জেকশন)
এটিকে বলা হয় ব্যথানাশক এপিডুরাল ইনজেকশন। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের মাধ্যমে কোমরের জয়েন্টের ভিতরে ব্যথানাশক এই ইনজেকশন দেয়া হয়, যা নার্ভ বা স্নায়ুর মুলে পৌছে। ফলে স্নায়ুমূলের উত্তেজনা কমে যায়, যা কোমরের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
♣৩,অপারেশন (সার্জারী)
*** সম্পাদনায় ***
ডাঃ মোঃ মাহফুজুর রহমান
এমবিবিএস, এফসিপিএস(ফিজিক্যাল মেডিসিন)
বাত-ব্যথা, মেরুদন্ড-জয়েন্ট রোগ, আর্থ্রাইটিস,
স্ট্রোক ও প্যারালাইসিস বিশেষজ্ঞ
কনসালটেন্ট,
পার্কভিউ হসপিটাল প্রাঃ লিঃ, চট্টগ্রাম
যোগাযোগঃ ০১৩১২ ৩৯ ৫৬ ৩৮
—————————————————–
♦বিস্তারিত তথ্য জানতে এই লিংকে ক্লিক করুনঃ
ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *